পথিকৃৎ কে ? পাঁচকড়ি দে ।
== এই ব্লগে
প্রদর্শিত অপরের রচনাংশ, স্থিরচিত্র বা অলংকরণের কপিরাইট
আমাদের নয় । ==
পোস্টের বক্তব্য স্পষ্টতর করতে
এগুলি সাজানো হচ্ছে । কোনও ব্যবসায়িক স্বার্থে নয় ।
BlOGUS ব্লগে ‘পথিকৃৎ কে ? পাঁচকড়ি দে ।’ । |
পাঁচকড়ি দে । |
‘হত্যাকারী
কে ?’
‘দ্য মার্ডার অফ রজার অ্যাকরয়েড’
। BlOGUS বন্ধু !
আপনি কি এই
রোমাঞ্চিকাদ্বয় অদ্যাবধি পড়েন নাই ?
সত্বর ব্লগস্থান
ত্যাগ করুন ।
নচেৎ ভবিষ্যৎ
পাঠকালে হ্রাস পাইবে রসের পরিমাণ ।
‘বিভ্রান্তি
সৃষ্টিকারী বিবৃতিকার’ বলিয়া একটি ধারণা সাহিত্যে, চলচ্ছবিতে প্রচলিত ।
আখ্যায়িকা
যাঁহার জবানিতে, তাঁহাকে বিশ্বাস করিয়া অগ্রসর হইতেছেন ।
সহসা
অন্তিমপর্বে উপলব্ধি করিবেন, তিনি আদ্যন্ত প্রচ্ছন্ন রাখিয়াছেন প্রকৃত
আত্মপরিচয় ।
আপনি প্রথমাবধি
প্রতারিত !
রহস্যাখ্যানে
এহেন প্রান্তিক চমক সর্বাধিক উপভোগ্য ।
‘দ্য
মার্ডার অফ রজার অ্যাকরয়েড’, প্রথম সংস্করণ । |
সেক্ষেত্রে উক্ত
কৌশলের উদ্ভাবক রূপে সম্মান লাভ করিয়াছেন আগাথা ক্রিস্টি১ ।
পূর্বোল্লিখিত রজার অ্যাকরয়েড বধ বৃত্তান্ত
(১৯২৫)২ রচনার সূত্রে ।
আপন সময়কালে
বঙ্গের প্রখ্যাততম রহস্যরচনাকার ছিলেন পাঁচকড়ি দে৩ ।
‘দ্য মার্ডার
অফ রজার অ্যাকরয়েড’ ঘটিতে তখনও চব্বিশ বৎসর বাকি ।
পাঁচকড়ি বাবু লিখিলেন ‘হত্যাকারী
কে ?’
সম্পূর্ণ ভিন্ন
কাহিনি ।
কিন্তু
কিমাশ্চর্যম !
ইহাতেও চমক সৃজন
তথা গ্রন্থিমোচন হইয়াছে ঐ বিভ্রান্তিকর বক্তার পদ্ধতিতেই ।
ক্রিস্টি-পূর্ব ১৯০১
সালে যাহা অভাবনীয় ।
আগাথা ক্রিস্টি । |
নহিলে তাঁহারাও
বুঝি সমস্বরে ঘোষণা করিতেন :
রহস্য বুননে এই
প্রণালীর পথিকৃৎ কে ? পাঁচকড়ি দে ।
ক্রিস্টি-ক্লাসিকের
সমতুল নহে ? ক্ষতি কী !
‘হত্যাকারী
কে ?’ স্বীয় স্বাতন্ত্র্যে
সমুজ্জ্বল ।
এই ‘ডিটেক্টীভ-প্রহেলিকা’
দফায় দফায়৪ আবির্ভূত হয় ‘আরতি’৫ মাসিকপত্রে ।
১৩১০ সনে
কেতাবরূপে প্রকাশ ।
পত্রিকায় পুস্তকে প্রচুর পাঠভেদ৬ ।'আরতি', দ্বিতীয় বর্ষের পৃষ্ঠায় 'হত্যাকারী কে ?' (১৩০৮) । |
'হত্যাকারী কে ?' গ্রন্থের সূচনায় 'ওথেলো' হইতে উদ্ধৃতি । |
‘হত্যাকারী
কে ?’-তে জোড়া জবানদার
।
পূর্বোক্ত
কৌশল-অনুসারে একজনের জবানবন্দি সম্পূর্ণ নির্ভরযোগ্য নহে ।
উপন্যাসিকা পাঠান্তে আপনাকে প্রবঞ্চিত জানিয়াও
রোমাঞ্চিত হন পাঠক ।‘হত্যাকারী
কে’ গ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণ হইতে । চিত্রশিল্পী : আর জি দাস । মোক্ষদা-র হাত ধরিবার প্রসঙ্গ নাই 'আরতি'-র পাঠে । চিত্রের বাম পার্শ্বে গোয়েন্দা অক্ষয়কুমার । |
রজার-সংহারের
তদন্তকারী স্বনামধন্য এরক্যুল পোয়ারো ।
পাঁচকড়ি-প্রহেলিকার
রহস্যসন্ধানী স্বভাবে তাঁহার বিপরীত ।
নাম অক্ষয়কুমার৭ ।
গোয়েন্দা হিসাবে আপনি কি
তাঁহাকে বহাল করিতে ব্যাকুল ?
হুঁকা-হস্তে
ব্যস্ত গৃহস্বামীর প্রাচীন মূর্তি দর্শনে মোহভঙ্গ না ঘটে ।
অক্ষয় বাবু ধুরন্ধর
পেশাদার ।
পারিশ্রমিক-প্রসঙ্গে তিনি
রেয়াত করিবার পাত্র নহেন ।
মৌখিক
প্রতিশ্রুতিতে আস্থা নাই ।
পুরাদস্তুর
লিখিত-পড়িত করিয়া লইতে পারেন ।
কী ভাবিতেছেন ?
১৩০৮ সন । কতই বা
হইবে পারিতোষিকের অঙ্ক ?
ক্ষেত্রবিশেষে সহস্র
টাকাও অপর্যাপ্ত জ্ঞান করেন অক্ষয়কুমার ।
প্রচলিত নীতি-আদর্শ
হইতে তিলেক বিচ্যুতি কি আপনার অসহ্য বোধ হয় ?
প্রয়োজনে কিন্তু
প্রধান সাক্ষীকে অম্লানবদনে উৎকোচদানের সুপরামর্শ দিয়া থাকেন হুনহর হুনুর ।
সাবধান !
অক্ষয়-আবাসে
প্রবেশকালে হ্রেষারব শ্রবণে হতবুদ্ধি হইবেন না ।
তৎকালে অশ্বরূপ ধারণ করিয়াছেন অক্ষয়কুমার ।পাঁচকড়ি দে মহাশয়ের স্বাক্ষর । |
জনৈক নির্মম
নির্যাতকের নির্দয় নির্দেশে ।
ঐ যিনি -
প্রত্যক্ষ করুন - দাদামহাশয়ের পৃষ্ঠারূঢ় ।
কেমন ? কহিয়াছিলাম কিনা,
প্রবীণ গোয়েন্দাপ্রবর বর্তমানে ব্যস্ত ?
_______________________________________________________________________________________________________
পুনশ্চ
‘চিত্রচোর’৮
কাহিনি হইতে :
“
‘হত্যাকারী কে ?’
‘পাঁচকড়ি
দে ।’ বলিয়া ব্যোমকেশ সুট করিয়া শয়নকক্ষে ঢুকিয়া পড়িল ।”
‘চিত্রচোর’৯
চিত্ররূপ হইতে :
“খুনি কে
?”
“পাঁচকড়ি
দে ।” [বলিয়া ছবির ব্যোমকেশ দোলায়মান কেদারা ত্যাগ করিলেন ।]
পরম পরিতাপের বিষয়, পাঁচকড়ি দে মহাশয় ‘খুনি কে ? ’ শীর্ষক কোন গ্রন্থ প্রণয়ন করিয়া
যাইতে পারেন নাই ।
_______________________________________________________________________________________________________
১ ইংরাজ লেখিকা ( ১৮৯০ – ১৯৭৬ ) ।
২ সর্বপ্রথম লন্ডন-এর পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রকাশ ‘হু কিলড অ্যাকরয়েড ?’ নামে (১৯২৫) ।
পর বৎসরে ‘দ্য মার্ডার অফ রজার অ্যাকরয়েড’ গ্রন্থ বাহির হয় ।
৩ ১৮৭৩ – ১৯৪৫ ।
৪ ‘আরতি’, কার্ত্তিক ১৩০৮ – জ্যৈষ্ঠ ১৩০৯ (২য় বর্ষ, ৫ম – ১২শ সংখ্যা) মোট পাঁচ কিস্তিতে ।
৯ম ও ১১শ সংখ্যায় ‘হত্যাকারী কে ?’ নাই ।
৫ ‘আরতি’-র আলোচ্য পর্যায়ের সম্পাদক : সারদাচরণ ঘোষ । ময়মনসিংহ সাহিত্য সভা হইতে প্রকাশিত ।
৬ যথা দ্বিতীয় সংস্করণে (১৯০৭) দেখিতেছি ‘আরতি’-র দশম ও উপসংহার পরিচ্ছেদ গরহাজির ।
সপ্তম-এ পুনরায় তাহা স্বস্থানে বিরাজমান ।
উপরন্তু এই এডিশনে সংযোজিত হইয়াছে প্রথম বিবৃতিকার-এর পরিচয় । ‘আরতি’-র মূল পাঠে তাহা নাই ।
‘হত্যাকারী কে ?’, কল্লোল সংস্করণ, ১৯৯৯ ও ‘পাঁচকড়ি দে রচনাবলী’ প্রথম খণ্ড, করুণা প্রকাশনী, ১৪১৭ :
সাম্প্রতিক এই সংস্করণসমূহেও অন্ত্য পরিচ্ছেদ অনুপস্থিত ।
৭ পাঁচকড়ি দে প্রণীত ‘চিঠিচুরি’ ছোটগল্পে বাইশ বৎসরের অক্ষয়কুমার পুলিশ কর্মচারী হইলেন ।
‘হত্যা রহস্য’ উপন্যাসে তিনি চল্লিশ বৎসরের ডিটেকটিভ ইন্সপেক্টর ।
৮ ‘চিত্রচোর’, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় (১৩৫৮) ।
৯ ‘আবার ব্যোমকেশ’ (২০১২) ।
মার্কিন
পত্রিকায় সংক্ষিপ্ত আকারে ‘হু কিলড অ্যাকরয়েড ?’ ধারাবাহিক (১৯২৬) |
পর বৎসরে ‘দ্য মার্ডার অফ রজার অ্যাকরয়েড’ গ্রন্থ বাহির হয় ।
৪ ‘আরতি’, কার্ত্তিক ১৩০৮ – জ্যৈষ্ঠ ১৩০৯ (২য় বর্ষ, ৫ম – ১২শ সংখ্যা) মোট পাঁচ কিস্তিতে ।
৯ম ও ১১শ সংখ্যায় ‘হত্যাকারী কে ?’ নাই ।
৫ ‘আরতি’-র আলোচ্য পর্যায়ের সম্পাদক : সারদাচরণ ঘোষ । ময়মনসিংহ সাহিত্য সভা হইতে প্রকাশিত ।
৬ যথা দ্বিতীয় সংস্করণে (১৯০৭) দেখিতেছি ‘আরতি’-র দশম ও উপসংহার পরিচ্ছেদ গরহাজির ।
সপ্তম-এ পুনরায় তাহা স্বস্থানে বিরাজমান ।
উপরন্তু এই এডিশনে সংযোজিত হইয়াছে প্রথম বিবৃতিকার-এর পরিচয় । ‘আরতি’-র মূল পাঠে তাহা নাই ।
‘হত্যাকারী কে ?’, কল্লোল সংস্করণ, ১৯৯৯ ও ‘পাঁচকড়ি দে রচনাবলী’ প্রথম খণ্ড, করুণা প্রকাশনী, ১৪১৭ :
সাম্প্রতিক এই সংস্করণসমূহেও অন্ত্য পরিচ্ছেদ অনুপস্থিত ।
৭ পাঁচকড়ি দে প্রণীত ‘চিঠিচুরি’ ছোটগল্পে বাইশ বৎসরের অক্ষয়কুমার পুলিশ কর্মচারী হইলেন ।
‘হত্যা রহস্য’ উপন্যাসে তিনি চল্লিশ বৎসরের ডিটেকটিভ ইন্সপেক্টর ।
৮ ‘চিত্রচোর’, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় (১৩৫৮) ।
৯ ‘আবার ব্যোমকেশ’ (২০১২) ।
_______________________________________________________________________________________________________
13 comments:
ক্ষুদ্রকায় নিবন্ধটি পাঠান্তে, উল্লিখিত দুটি পুস্তকই পাঠ করিবার বাসনা প্রবল হইয়াছে। তৎপর হই।
bah bah osadharon...ebar Panchkari De'r femme fatale Jumelia ke niye likhun, khub interesting character
দারুণ বলেছেন দেবজ্যোতি বাবু !
জুমেলিয়া-কেন্দ্রিক মারকাটারি উপন্যাসগুলি যদি কোনদিন চলচ্চিত্রায়িত হয় ...
স্বপ্ন দেখে লাভ নেই বোধহয়, কী বলেন ?
অশেষ ধন্যবাদ ঋজু বাবু !
কোন অজ্ঞাত কারণে গোয়েন্দা-কাহিনি বিষয়ক আলোচনায় 'হত্যাকারী কে ?' গ্রন্থটি অবধারিতভাবে উপেক্ষিত হয় ।
কিন্তু এর আর একটু বেশি সম্মান প্রাপ্য বলে আমার বিনীত ধারণা ।
Jumelia ke niye lekha Mayabee nirbak juge chobi hoyeche, 1930 e, Renu debi hoyechilen Jumelia
Jumelia ke jane kojon? Onake niye likhle khub bhalo hoy. Ei lekhar sesher dike Byomkesher uktigulo - moshai kamal kore dilen.
আরেব্বাস ! এ-তথ্য একেবারেই অজানা ছিল ।
অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে !
অশেষ ধন্যবাদ কৌশিক বাবু ।
আপনাদের সবার মতামত জানতে পারলে তবেই Blogus নিয়ে এগোবার প্রেরণা পাই ।
পাশে থাকবেন । :)
Abar fatiye diyecho! Hatyakari k Aar Khuni k eita Khub sundor poribeshon korecho? Jumalia to hok!
অশেষ ধন্যবাদ অর্ণব !
তোমার মতামত নয়া পেলে Blogus অসম্পূর্ণ থেকে যায় ।
'Roger Ackroyd' পড়েছি। পাঁচকড়িবাবুর লেখার সঙ্গে পরিচিত নই। আসলে 'ব্যোমকেশ সমগ্র'-র ভূমিকা হয়তো পাঁচকড়ি দে প্রসঙ্গে ঔদাসীন্যের জন্য কিছুটা দায়ী। ওনার বই কি এখনো বাজারে পাওয়া যায়?
হ্যাঁ স্নেহাশিস বাবু ।
করুণা প্রকাশনী থেকে পাঁচকড়ি দে মহাশয়ের রচনাবলী খণ্ডে খণ্ডে প্রকাশিত হচ্ছে ।
অসংখ্য ধন্যবাদ। প্রসঙ্গত, ওই একই ধাঁচে বাংলার জনপ্রিয়তম গোয়েন্দার 'গোলাপী মুক্তা রহস্য' গল্পটিও রয়েছে। যদিও সেখানে 'অপরাধী'-দের উদ্দেশ্য সাধু। সত্যজিৎ রায় এই ধাঁচে কাকে পথিকৃৎ মনে করতেন সেটা জানার বোধহয় আর কোনো উপায় নেই।
Post a Comment